জুতোকে পরাই মুজো
আবিষ্কারের পর থেকেই আগলে রাখছে মুজোকে,
যেন পোশাকী পতœী আর জুতোকে দেখুন
কতো সুইপারের শ্রমে, কর্দমাক্ত পিচভাঙা পথে,
কলার খোসার ব্যঙ্গভরা ফুটপাতে,
মুক্ত টয়লেট-অলা দেওয়ালের গা-ভেজা, পা-ভেজা সুরকি...
জুতোকে হাঁটতে হয় আরো কতো পথ,
সিটি কর্পোরেশনের উপচেপড়া ডাস্টবিন জয় করে
নির্ভয়ে চলা জানে বুকপিঠ, জুতোর জীবন।
পায়েস চেসিস জানে কতো শতাব্দী চলে গেলো
তাদের গোসল হলো না।
অবয়বে প্রসাধন-মাখা গর্ব আছে,
তবে তলার কাহিনী গলায় আসে না।
বয়েস বাড়তে বাড়তে জুতো বড়ো
ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীর সন্ত্রাস লালনে জুতোকেও
হতে হলো পাপবিদ্ধ সহযোদ্ধা ।
জুতোকে বুট বললেই এক দুর্ধর্ষ টেরর
দাঁত খলবল করে হাঁক দিয়ে ওঠে।
জার্মান, নাৎসী আর বৃটিশ-পাকিস্তান, বার্মার পাশে
ভারত বাংলাদেশেও বুটের বাহার আছে।
বুটের হুংকার বা আওয়াজ বিষয়ে
কবিতা হয়েছে, শান্তিবাহিনী হয়েছে
কিন্তু জুতোর সংস্কার হলো না।
জুতোপেটা জীবনের স্বাদ পেতে পেতে
দারিদ্য্র-দাবানো ক্রীতদাস দেহ
দেশে দেশে কৃশ, লম্বাটে বা বামণ হচ্ছে,
আরেক আলোয় জুতোপরা সভ্যতা
মাটির স্পর্শ না পেয়ে
ভুলতে বসেছে প্রকৃতি-শিকড়-প্রেম।
জুতোহীন জীবন নিয়ে একজন চিত্রকর
মকবুল ফিদা হুসেন বেহুদা ফিরলেন
ক্যালকাটা ক্লাবের দরোজা থেকে,
পাদুকা পরা না পরার স্বাধীনতা নিয়ে,
বৃটিশের নিয়ম কাঠামো না ভেঙে বরং
একে দিলেন অভিমনের স্মৃতি ক্যানভাস।
জুতোর সঙ্গে যেমন প্রক্রিয়াজাতকরণ
চামড়া জড়িত, সেভাবেই লেপ্টে থাকে
গরিবের গাল, পিঠ, পাতামল।
জুতোরা পুরনো হলে মুজোর চেয়েও
গন্ধযুক্ত ধারালো শাসক হয়ে ওঠে
যেন পুরোটা মোজাইক, তলানি পেরেক।
ফাঁস-ফিতে মৃত্যু নিয়ে রহস্যের পোস্টমর্টেম।
এভাবে জামাই-জুতো একাধিক শতাব্দিকে পেটালো,
তবু লজ্জিত হলো না ঔদ্ধত্যের শরীর।
এডিস মশার ভয়ে মানুষ মশারীতে ডুবে থাকে,
জুতোকেও তাই হেফাজতে নিতে
পরিশুদ্ধ মোজার ভেতরে ঢোকাই।
মোজাকন্যাদের স্বাধীনতা দিয়ে
সন্ত্রাসের বুটগুলোকে শেখাই সংবরণ, পবিত্রতা
ধর্মঘর আর শহীদ মিনারে চলা পাতামেলা ব্যাকরণ,
বোঝাই অবদমন, বিশ্বশান্তি, মোলায়েম সংযম।