সামান্থা স্মিথের জন্যে খোলা চিঠি পটভূমি
সামান্থা স্মিথ। একজন মার্কিন কিশোরী। সে ঘটালো এ বিশাল ঘটনা। সালটি
ছিলো ১৯৮৫। তখন বড়ো দেশগুলোতে চলছে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি।
হুমকির মুখে চলে যায় বিশ্বশান্তি। সে সময় সামান্থা একটি চিঠি লিখলো সোভিয়েত
রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ইউরি আন্দ্রেপভের নিকট। সম্মিলিত রাশিয়া তখন এক সুবিশাল
দেশ। পারমাণবিক অস্ত্রের কারখানা বানিয়েছে। গবেষণা ও প্রস্তুতি চালাচ্ছে
সমানে। সামান্থা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেপভকে লিখলোÑ পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি বন্ধ
করতে হবে। বোমামুক্ত বিশ্ব উপহার দিতে হবে আগামী দিনগুলোকে।
প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেপভ চিঠি পেয়ে খুশি হলেন। ভীষণ ব্যস্ত তবু জবাব দিলেন।
রাশিয়ায় আমন্ত্রণ জানালেন সামান্থাকে। এসে দেখতে বললেন যে, শান্তি প্রতিষ্ঠায়
তার দেশে অনেক ভালো কর্মসূচিও রয়েছে। বিষয়টি মার্কিন সরকার গুরুত্বের সাথে
নিলো। তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে সামান্থাকে পাঠিয়ে দিলো রাশিয়ার রাজধানী
মস্কোতে। সেবার আন্দ্রেপভের সাথে সাক্ষাত হয়নি, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সামান্থার
ভ্রমণ বেশ আলোড়ন তোলে। বিশ্ববাসী তাকে ‘শান্তির দূত’ নামে ডাকতে থাকে।
সামান্থাও দেশে ফিরে এসে শুরু করে আরো নতুন নতুন কাজ। ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি
চাই’Ñ এই শ্লে¬াগানের ওপর একটি ছবি তৈরি হচ্ছিলো। সামান্থা তাতে অভিনয়
করছিলো মূল ভূমিকায়। কিন্তু শেষ করতে পারলো না।
শ্যুটিং করতে যেতে হবে গ্রামে। বাবা আর্থার স্মিথসহ রওনা দিলো প্লেনে। কিন্তু
মাঝ পথেই দুর্ঘটনা। মেঘের সাথে ধাক্কা লেগে চূর্ণ-বিচূর্ণ হলো আকাশ-যান।
পাঁচজন আরোহীসহ পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেলো শান্তিকন্যা সামান্থা স্মিথ।
তারিখটি ছিলো ০২ সেপ্টেম্বর। এরপর সারা বিশ্বেই তোলপাড়, শোকের আহাজারি।
বাংলাদেশে অনেক লেখালেখি হয়। তারুণ্যের আলোড়নে আমিও নির্মাণ করি
একটি সহজ কবিতা। শিরোনাম : ‘সামান্থা স্মিথের জন্যে খোলা চিঠি’। ছাপা হয়
দৈনিক সংবাদ-এ। পাঠকও আলোড়িত হন। এ কবিতাটির জন্যে আমি যুব
ইউনিয়ন পুরস্কার ’৮৫ পেয়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল টিএসসি বা
ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে সম্মাননা গ্রহণকালে দর্শকদের দাবিমতে তুলে দিতে হয়
স্বকণ্ঠ আবৃত্তি। মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি ও যুক্তিহীন যুদ্ধের বিরুদ্ধে অনেক লিখেছি।
এখনও লেখার ট্রেন ধাবমান। তবে এটি বিশিষ্টতা পেয়েছে নানা কারণে। প্রধানত
কবিতাটির সহজ ভাষা সব বয়েসের পাঠককে একযোগে আলোড়িত করতে পারে।