Print

বাঁধা চোখ ধাঁধা মন

চোখ বেঁধেছো বেশ করেছো, কি দিয়ে হায়

জানতে দেবে?

ওড়না নাকি পাঁগড়ি কোনো খল-পুরুষের?

কিংবা কোনো রক্ত মাখা রুমাল নাকি

অন্ধকারে বাতাস তবু কেবল রক্ত শুঁকি

আমার শরীর জিম্মি করে

কি দাবি দাও দুখ-পৃথিবীর বুক বরাবর?

বন্ধ দু’চোখ বেশতো আছি কষ্ট দেখার বিরতিতে,

ভাবনা গাড়ি চালিয়ে দেখি ট্রাফিক জ্যামে ঘাম ঝরে না

শান্তি-সড়ক বলছে হঠাৎ চশমা খোলো চোখ খুলে দাও

ধোঁয়ার বাতাস কাঁদানে গ্যাস সীসা ছোঁয়া,

পচন-প্রেমিক আবর্জনা, পিঁপড়ে সারির ট্রেনিং বিহীন

রিকশা-বেবীর বানভাসী ভাব,

সবকিছু কি মিউনিসিপ্যাল ট্রাক তাড়ালো?

চোখের আকাশ কত্তো যে নীল, বিশাল সুনীল

আর পৃথিবী সবুজ ধরে, বৃক্ষে ব্যাপক সবুজাভ।

দ্বিতল বাসের খুঁপড়ি থেকে প্রেমিক মোরগ

ঝুঁটি’অলায় জুটি বেঁধে রমনা গ্রীনে

ভালোবাসার চাঁদকে খোঁজে,

সাক্ষী রেখে কবুল করে ঘরের শপথ।

অথচ সেই গাছের ঘরে সন্ত্রাসী নেই,

উদোম বাসর স্বর্ণ বিকেল চাঁদার দু’হাত

কেউ কাটেনি সচল বাসে পুঁজির পকেট,

কেউ ভাঙেনি মিছিল হয়ে বোকা-সাদা গ্যাসের গরাদ,

স্বচ্ছ সবার ভালোবাসা যায় যে দেখা।

কিন্তু এসব স্বপ্ন কথা, শুধুই সেলাই ভাবনা-কাঁথায়!

আমি এখন বন্দি ভীষণ, জিম্মি ভীষণ

দু’চোখ বাঁধা, পট্টিমারা পাগলা হাতে,

কি জানি হায় কোথায় আছি,

আলোর ঘরে? অন্ধকারে?

এটুক বুঝি সন্ত্রাসী হাত অস্ত্র নাড়ে,

প্রাণ-ক্ষমতার দীর্ঘ ছায়া পাশেই হাঁটে

কী চায় তারা?

মুক্তিপণে নিযুত ডলার? দেশ-ক্ষমতা?

হৃদয় মোমে জ্বালিয়ে রাখা প্রাণ-প্রেমিকার

চোখ টাটানো কামজ দেহ?

কোন দাবিতে চোখকে দিলো অমাবশ্যার বিষন্নতা।

আমিতো এক কর্মী লেখক নির্বিবাদী,

কান্তি খুঁজি খেলার মাঠে

দু’টি দলের লড়াই-বড়াই জয়-পরাজয়

সব ছাপিয়ে বুনতে গেলাম লেখার মালা,

খুঁজতে গেলাম শ্যামল জমির সবুজ সুদূর,

সেচের জলে দল-ফসলের হোলিখেলা

গিজ গিজে মাছ, আয়না পুকুর চোখকে টানে,

এই যে এমন কাস্তে-কোদাল সরব জীবন

ঘুমন্তগ্রাম সড়ক পেয়ে উঠলো জেগে,

ভোরের পিঠা, সব আয়োজন নকশা কাটা

চোখের দেখায় দারিদ্র্য-টিপ যায় নি মুছে।

জোড়া মণির নিখুঁত নাচন পাতার নিচে

ছাতার নিচে বৃষ্টি ও রোদ ব্যর্থ যেমন

তেমন করেই নির্ভাবনায় সুখ খুঁজে যায়,

আবেগঘন আকুলতায় চোখ টিপে হায়

চিঠি পাঠায় আরেক চোখের ঠিকানাতে

ভালোবাসার আছে আবার নিত্য দু’চোখ

একটি বড়ো ফঙ্গবেনে, ভাব ভূমিকার

হৃদয়-লোবান, কোকীলময়ী কামজ ভাষা

অন্যটিতে কাকের কোরাস  বিরহ মেঘ

স্মৃতিকম্পের জলতরঙ্গ

চোখের বাঁকে শোকের কাজল লেপ্টে থাকা...

হয়তো শেষে কলস-দড়ি অভিমানী লাশের পাশে

নৃত্য করে পরিবারে চোখে চোখে বন্যা নামে।

চোখকে ডাকে বাঁধের মানুষ ভাঙন ঠেকাও

চোখকে ডাকে দুধের শিশু গাভি বাঁচাও,

চোখকে ডাকে পরীক্ষাগার নকল সর্ওা

চোখকে ডাকে সার্টিফিকেট চাকরি দেখাও

চোখকে ডাকে কৃষক-শ্রমিক পাটকে বাঁচাও

নৃত্য-গানের মুদ্রা খেয়ে মাদক-চোখে

নগ্ন ইঁদুর কাটছো পোশাক যাও চলে যাও।

চোখের আছে সকল বয়েস শিশু-কিশোর-যুবক-প্রবীণ,

পূর্নজন্মে চোখের এখন বিশাল বিজয়

কর্ণিয়াদ্বয় সংযোজনে, চক্ষুদানে মহৎ মানুষ

হাত বাড়ালো কিন্তু বলো

 

         কোন আগামীর কোন্ সে চোখের কোটরে এই

                নতুন চোখের বসত হবে?

নতুন মালিক কেমন মানুষ? কোন্ অমানুষ?

কিংবা ধরো খুন-আসামী ফাঁসির সেলে

                চোখ দিয়ে যায় আগামীকে,

                শান্তিকামী অন্ধ শরীর নতুন আলোয় উদ্ভাসিত

কিন্তু সে কি খুনের চোখে রক্ত খাবে?

চোখ-বদলে ভালো মানুষ মন্দ হবে

                মন্দ পাবে ভালোর দখল

                এই বিনিময় সত্য ছড়ায়,

                চোখ পাবে কী মনের দখল?

চোখ কি মনের তাবৎ কথা বলতে পারে?

প্রশ্ন অনেক, এখন যেমন দু’চোখ বাঁধা

দু’হাত বাঁধা সন্ত্রাসীদের রাগ-শেকলে,

কী অপরাধ? কেনোর জবাব বড়োই সহজ

আমি নাকি চোখের দেখায় মনের লেখায়

                শিশু পাচার নারী পাচার বিবাদ করি,

                শহুরে সুখ নিলাম হলে মানুষ ডাকি

                এসিড-পোড়া রমণীদের মিছিলে যাই

                রাজনীতিতে বোমা-লাশের গন্ধ শুঁকি,

                ভুল শাসনের প্রতিবাদে কলম খুলি;

                হঠাৎ সাজি আমিই আমার অভিভাবক

অনিয়মের সবকিছুকে নিয়ম মানার

দাবি দিয়েই বন্দি আমার দু’হাত-দু’চোখ

হয়তো এমন হাজার বছর, যাবজ্জীবন

হয়তো আছে এমন আবেগ হাজার লাখে

আমি তবু মিছিল করি একলা মিছিল

মনের সাথে মন মিলিয়ে নিজকে বাজাই

শ্লোগান তুলিÑ চোখ খুলে দে, চোখ খুলে দে,

                                      চোখ খুলে দে

চোখ থেকেও অন্ধ যারা

তাদের চোখে প্রতিবাদের প্রতিরোধের

ভালোবাসার, ভালো দেখার

চোখ তুলে দে, চোখ তুলে দে,

                                      চোখ তুলে দে।