Print

কবিতা বিষয়ে

কবিতা কোরান নয়

গীতার প্রচ্ছদ বা বেদ-বাইবেল কিছু নয়

তবে অন্য কিছু,

ফলবান মানুষের জলকণা...।

 

পানিরা পবিত্র থাকে, পতিতাও  স্থান  সমাপনে

খুঁজে পায় প্রসন্ন পুণ্যতা, কিন্তু পানিগুলো, জলগুলো

ধুলো মাখা পাপগুলো, গ্লাণিগুলো কে করে শোষণ?

যে করে ধারণ, সেই জল-পানি সবার ভেতরে ঢোকে

তারপরও তাকেই পবিত্র বলি।

 

এভাবেই কবিতার জলকণা জগ থেকে গ্লাসে গ্লাসে,

               কুয়োর বালতি থেকে রমণীর কোমরে-কলসে,

               সেচের সেঁওতি চুঁয়ে ধানক্ষেতে, নদী ও বৈঠার টানা ছন্দে,

               জাহাজে-মাস্তুলে মায় সমুদ্রের দোলাচলে

সারেং-এর দ্বীপখোঁজা বন্দর বিজয় কণ্ঠে,

কবিতা ফুটতে পারে আনন্দের সব আতিশয্যে।

 

শুধুই কোকিল কেনো, বাঁদুরের জন্যেও কবিতা নিষিদ্ধ নয়।

পবিত্র জল কি নেই হোটেলে-জলসাগরে,

চরিত্রে কিছুটা রঙ, কিছুটা ঢং ধরে

যদি কেউ নেশার লাটিমে ঘোরায় কবিতার বিশুদ্ধ রেকর্ড

ক্ষতি কি?

ক্ষতি কার? কবিতার?

কবিতা এমন ঘরপোড়া গরু নয়

মেঘ দেখলেই গোয়ালে লুকায়।

রক্ষণশীলতার নারীও নয়, বোরকা-অযুর চেয়ে

তুলসী ¯œানের চেয়ে সে বড়ো সহজ পাঠ,

শুধু চায় মনের উদ্যম সাথে শিল্পীত সংযম,

তবুও আবার বলি

 

কবিতা মিলাদ নয়, মন্দিরের মন্ত্রপাঠ, গীর্জার কনফেস

সবখানে থাকলেও কবিতা স্বাধীন, সার্বভৌম

কল্পনার গল্প রথে

রকেটের চেয়ে গতিশীল, সৌরজগতের চেয়ে দীর্ঘ ও বৃদ্ধ।

 

জানি না কে আগে

কবিতা না ধর্মগ্রন্থ, বাণী না পয়ার?

অথচ রেহেলে পড়ি অগাধ অন্ত্যমিলের কবিতা-কৌশল!

 

তারপর কে আগে ছড়ালো গদ্য,

পদ্যের প্রলেপ মুছে পৃথিবীর সমাজ-সমান্তরালে

গদ্যেও ধরেছে গান মানুষের কবিমন,

সৃষ্টিশীলতার হাতে আজ হাতুড়ী অতীত,

 

ঠোঁট মেলে দিলো দেহ-মোহে আকাশ সংস্কৃতি।

হয়তো কলম নয়, যন্ত্রের বোতাম টিপে কবিরা এখন

আধুনিক শব্দটিকে পাঠান নিলামে, অবকাশে।

আর পোস্টমডার্নিজমের হোস্ট সেজে

হাইব্রিড মুরগির রোস্ট দিয়ে ভোজসভাতেও

কবিতা চালান, আপত্তি কি, চলতেই পারে।

 

সার দেওয়া সুন্দরী যদি সুদীর্ঘ চুমুর মিনিট-মুহূর্ত অবকাশে

কিছু পংক্তিকে ঠোঁটে তুলে নেয় মুগ্ধতায়,

স্বরগ্রামে আবৃত্তি জাগাতে জাগাতে যদি

হিমবাহ শরীরকেই জাগিয়ে তোলে,

রমণে বমনে যদি খোলে কাব্যগ্রন্থের পোশাকী মোড়ক,

আদিম অভ্যাসে নরনারী গদ্যপদ্য সেজে যদি

ছন্দে-বর্ণে-গন্ধে তোলে সাজানো শব্দের দ্বৈত উচ্চারণ

সেখানেও সাফল্য সৃষ্টির।

ক্লান্তির শরীর থেকে বস্ত্রভেজা জলকণা মনকে ভেজায়,

সেই সুখজল সাফল্যকে খুঁজে পাই কবিতার উপমায়।

 

কবিতা সবার হোক,

গরিবী-বিমুখ বিত্ত থেকে বস্তির বিপন্ন মুখ,

শাওয়ারের শুচিবাই কন্যা থেকে শাপলাভর নিরন্ন কিশোরী,

 

      প্রকৌশলীর কৌশলে, চিকিৎসকের বয়ানে, কৃষিবিদের জিদে

      অংকুরিত হতে পারে কবিতা বিজ্ঞান।

      এই বীজ দারিদ্র্য মোচনে, মুক্তিযুদ্ধ বোঝা প্রহরী প্রজন্মে,

      সুশাসনের সন্ধানে, তাবৎ ভ্রমণে পর্যটনে, শিক্ষাঙ্গনে

      শ্রমিকের জলঘামে বেঁচে থাকা বিশুদ্ধ বাষ্পের ধ্বনিরেখা,

      বৃষ্টি-মেঘ-পাহাড়-ঝর্ণার পরে নদী, পুকুর-সাগর

      দিন-মাস-বছর যেখাবে ঘোরে,

কবিতা সেভাবে বাঁচে,

বাঁচাতে পুষ্টিও দ্যায় মানবিক পৃথিবীকে।

 

সংবিধান রাষ্ট্রকে সাজাবে তবে তার আগে

কবিতা সাজাতে পারে সংবিধানের সানবাঁধা

                                     শ্বেত পাথরের শব্দ ইমারত,

গান-কবিতার দেশে দেশে

              গদ্যসুরে অহরহ পাঠ হবে রাষ্ট্রীয় পুস্তিকা।

 

ধর্মগ্রন্থ নিয়ে অতিভুল দ্বন্দ্ব হলে মানুষের

তিনিতো আছেন মহামঙ্গলের মহাজন,

সৃষ্টি রহস্যের আরেক বিস্ময়!

যদিও মানুষই জানে নির্মাণের সুকৌশল,

তবে সুগঠিত কবিতার চেয়ে দীর্ঘকাল বাঁচে না মানুষ!

 

যেমন অনেক কবিতার শ্লোক জানি,

জানতে পারিনি সেই আর্য-অনার্য কবিকে। শুধু জানা গেলো

কাব্য নির্মাতার আত্মার অধিক বাঁচে কবিতার প্রাণ।

জন্ম-জন্মান্তরে তবু বহাল রয়েছে কবিরই সন্ধান,

প্রকৃতি ও প্রগতিকে নিয়ে প্রশন্তির গান,

আহাজারি; কাব্য-আত্মদান!