আয়রে আমার ছায়া-জ্যোতি
আয়রে আমার জ্যোতি বসু আয়রে দাদা-ভাই,
আরেক জীবন জন্ম নেওয়া নতুন ধাঁধা চাই।
আত্মাকে বল দেহসমেত উল্টোদিকে ফেরা
যে দিকে তোর পিতৃবসত স্মৃতি-বেড়ায় ঘেরা।
যে মটিতে ন্যাংটা জীবন, যে গাঁয়ে শৈশব
পূজো লেটো যাত্রা ঘুড়ি ডাঙ্গুলি কই সব ?
ঝিঁ ঝিঁ ডাকের জোনাক পোকা; শ্মশান ঘাটের ভূত
ওদের নাকি তাড়িয়ে দেবে শহুরে বিদ্যুৎ।
গাঁয়ে এখন নতুন শিশু, মৌ-কিশোরের চাক
‘ আয়রে আমার জ্যোতি মামা’ হাঁক দিয়ে যায় ডাক।
ওদের আছে দু’চার কথা, খানিক দাবি-দাওয়া
নদী ভরা জলের দাবি সাঁতারে সুখ পাওয়া।
বৎস্য মানে মৎস্য ধরা বর্শা ভেলা ছিপ
জাল-ঝাঁকাতে ব্যস্ত কিশোর বৃষ্টি পড়ে টিপ,
দৃশ্য এমন বদলে গেছে; বদলিয়ে যায় স্বভাব
গাঁয়ে এখন সময়মতো জলের বড়োই অভাব।
পুণ্য¯œানে অপূর্ণ মন; হাঁটু জলেই থির,
কাঁখের কলস উপুড় করা; পূজারী অস্থির
প্রতিমাকে কোথায় ভাসাই কোথায় বিসর্জন
জলের ধারা ছিনলো কারা হবে কি অর্জন?
পিঠে পুলির পাইনে প্রসাদ চুলোতে নেই কাঠ
জল-অভাবে গাছ বাড়ে না, বনগুলো হয় মাঠ।
তিন ফসলী জমিনগুলো এক ফসলেই কাৎ
তিন বেলাতো দূরের কথা এক বেলা নেই ভাত!
নৌকাপথের কুটুম বাড়ি কবেই গেছিস ভুলে
পানসিগুলো ডাঙায় ঘুমোয়, গন্ধবিহীন ফুলে
মালা গেঁথে বসেই থাকে অভাগী এক বোন
মরচে পড়া মনগুলোতে মরছে বিনোদন।
কলের মেশিন টিভি টকি চলে না ক্যান ধ্যুৎ
আসি আসি করছে শুধু আসে না বিদ্যুৎ।
তারও নাকি জল প্রয়োজন উৎপাদনই কম,
সবার গতি বাড়াতে হায় জলই পারঙ্গম।
অটোমেটিক ঝর্ণাধারা, নগর ফোয়ারায়
জলসার্কাস, চোখকাড়া সুখ হৃদয়তো হারায়।
যমুনাতে সেতুর বাহার; জলের বাহার কই
জলকন্যা আটকে আছে ‘ফারাক্কা’তে অই
জলদেবীতো সবার দেবী; সবার প্রয়োজন
ভূগোল বলেÑসবার মাঝে সমান বিচরণ।
যে বিধাতা মানুষ বানান তিনিই দিলেন জল
তারই মানুষ বাঁধ বসিয়ে জল করে দখল।
তারপরেও মানব সেবায় মনিব হলি তুই
হে বিধাতার মানব-ছায়া ডাকছে তোকে ভূঁই
গঙ্গা ডাকে পদ্মা ডাকে তিস্তা-ওরে জ্যোতি
নদীর বুকে গতি দিতে কি আর এমন ক্ষতি?
কেউ বলে জল কেউ বা পানি, এসব বিষয় নয়
মাটির মায়ায় দে ছড়িয়ে মানবতার জয়।
পুনর্জন্মে আয়রে জ্যোতি, আয়রে মেঘের চাঁদ
আসার আগে দে খুলে দে বাংলা নদীর বাঁধ।
ক্স ঈষৎ পরিবর্তিত